প্রিয় মানিকগঞ্জবাসী


প্রিয় মানিকগঞ্জবাসী

আসসালামু আলাইকুম!

আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মানিত ক্যাপ্টেন জনাব মোহাম্মদ মতিউর রহমান গত ১৩ ই মে রোজ বুধবার হৃদ রোগে আক্রান্ত হয়ে জাতীয় হৃদ রোগ ইনিষ্টিটিউটে ভর্তি হয়ে চিকিৎসারত অবস্থায় গত ১৫ ই মে অর্থাৎ ২১ রমজান রোজ শুক্রবার দিবা গত রাতে মহান আল্লাহুর ডাকে সারা দিয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরকাল গমন করেন- ইন্নালিল্লিহি ওয়া ইন্না ইলাহী রজিউন।

তিনি ১৯৪৬ সালের ২৯ জানুয়ারি মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী বেপারি বংশে জন্ম গ্রহণ করেন এবং শিক্ষা জীবন শেষ করে ১৯৬৬ সালে ২৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন।

তিনি স্বাধীন বাংলার স্থপতি জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ডাকে ১৯৭১ সালে জেড ফোর্সের অধীনে ১ ই বেংগলের সাথে কর্মরত থেকে বাঙ্গালী জাতির জন্য একটি স্বাধীন ভূখণ্ড রচনার লক্ষে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বের সহিত অংশ গ্রহণ করেন-

মহান মুক্তিযুদ্ধে কৃতিত্বের সাথে অংশ গ্রহণ করায় বাংলাদেশ সরকার তাকে নিম্ন বর্ণিত পাঁচটি পদকে ভূষিত করেন-

১. সমর পদক
২. মুক্তি তারকা
৩. রণ পদক
৪. জয় পদক
৫. সংবিধান পদক

পরবর্তী সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সততার সহিত কর্মরত অবস্থায় বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিম্ন বর্ণিত আরও পাঁচটি পদকে ভূষিত হন-

১. দাবানল পদক
২. জৈষ্ঠ্যতা পদক-১
৩. জৈষ্ঠ্যতা পদক-২
৪. প্লাবন পদক
৫. জেষ্ঠ্যতা পদক-৩

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তার সতাতা ও কর্ম দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে তাকে সম্মানিত ক্যাপ্টেন পর্যন্ত পদোন্নতি প্রদান করেন এবং তিনি দীর্ঘ দিনের চাকরিরত অবস্থায় এলাকার মানুষের কথা চিন্তা করে তাদেরকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করার উৎসাহ হতে শুরু করে কর্মসংস্থান করতে সার্বিক সহায়তা করেন এবং পরবর্তী সময় তিনি অত্যন্ত সফলতার সহিত কর্ম জীবন শেষ করে ১৯৯৭ সালে ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী হতে অবসর গ্রহণ করেন।

উনার নাম্বার বিজেও-৩৯৫৯৯
মুক্তিযোদ্ধা সনদ নং ম-৫৪১২৮

তিনি চাকরি হতে অবসর গ্রহণ করে নিজ এলাকায় চলে আসেন এবং আসার পর থেকে মানুষের জন্য কিছু করার লক্ষে নিজ উপজেলার অবসর প্রাপ্ত সেনা সদস্য ও তাদের পরিবারের কথা চিন্তা করে দৌলতপুর সেনা কল্যাণ সংস্থা প্রতিষ্ঠিত করেন এবং সকলের সর্ব সম্মতিতে উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন।

অবসর জীবনে সাধারণ মানুষের অধিকার রক্ষার্থে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, দৌলতপুর উপজেলা শাখার "মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক" হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড, দৌলতপুর উপজেলা শাখার বারবার নির্বাচিত সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি আমাদের সবাইকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষে নিরলস পরিশ্রম করেন এবং একজন সফল পিতা হিসেবে আমাদের সকল প্রকার অধিকার রক্ষা করেন-

তিনি সর্বদা খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের পাশে থেকে বিভিন্ন প্রকার উৎসাহ উদ্দীপনা দানে সচেষ্ট থাকেন যার ফলে সাধারণ মানুষের অন্তর জয়ে সক্ষম হন।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতির মাঝেও গত ১৬ মে অর্থাৎ ২২ রমজান রোজ শনিবার তার জানাজায় সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতিই তার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা পরিরক্ষিত হয়।

বাংলাদেশ সরকার তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন কার্য সম্পাদন করেন-

এই মহান ব্যক্তিকে তার প্রাপ্যতা প্রদানের জন্য আমরা পারিবারিক ভাবে বাংলাদেশ সরকার ও এলাকাবাসীর প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ ও গর্বিত।

মানুষ সামাজিক জীব, সমাজে চলতে গেলে অনেক সময় নিজের অজান্তে আমার বাবার কোন ভুল আপনাদের চোখে ধরা পরলে কিংবা তার কোন আচরণে কেউ যদি কষ্ট পেয়ে থাকেন দয়া করে নিজ গুনে ক্ষমা করে দিবেন এবং কারো সাথে কোন প্রকার লেনদেন থাকলে আমার ও আমার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করবেন ইনশাআল্লাহ্ আমি ও আমার পরিবার আপনাদের সকল প্রকার লেনদেন সম্পন্ন করবো।

সেই সাথে আপনাদের সকলের কাছে বিনীত অনুরোধ আপনারা আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন যেন মহান আল্লাহ আমার বাবাকে তার যথাযথ মর্যাদা দান করেন এবং আমার মাকে সুস্থতা ও নেক হায়াত দান করেন।
সেই সাথে আমরা যেন বাবার আদর্শ বুকে ধারণ করে জীবনের বাকিটা সময় দেশ ও মানুষের কল্যাণে সর্বদা কাজ করে যেতে পারি।

"নিশ্চয়ই আল্লাহ মহান ও ক্ষমাশীল"

ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতায়

Post a Comment

0 Comments